ভারতের নগরায়নের বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব
ভূমিকা
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভারতে প্রায় ৩৭.৭ কোটি মানুষ শহর বা নগরে বসবাস করে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১.১৬%। ভারতে নগরায়নের ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়েছে—সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই শহরের বিকাশ লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে নগরায়নের হার আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতের নগরায়নের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো বোঝা গেলে শহরায়ন ও শহুরে সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
ভারতে নগরায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. বৃহৎ শহরে নগরায়নের উচ্চ হার
ভারতে বড় মেট্রোপলিটন শহর এবং ক্লাস-১ শহরে নগরায়নের হার সবচেয়ে বেশি। ছোট শহরগুলোর তুলনায়, বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি।
২. গ্রাম থেকে শহরে জনসংখ্যার চাপ
ভারতে নগরায়নের একটি বড় কারণ হলো গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন।
দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং সীমিত সুযোগের কারণে গ্রামবাসী শহরে আসে।
এই অভিবাসন শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং শহরের সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
৩. প্রাচীন ইতিহাস
ভারতে নগরায়নের ইতিহাস বহু প্রাচীন।
প্রাচীনকালে নদী কেন্দ্রিক নগর ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
সিন্ধু সভ্যতার শহরগুলো ছিল পরিকল্পিত ও সুগঠিত।
৪. নগরায়নের অর্থনৈতিক ধরণ
ভারতের নগরায়ন মূলত তৃতীয় শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন প্রশাসনিক শহর বা রাজধানী কেন্দ্রিক।
শিল্পের বিকাশ নগরায়নের সঙ্গে সমানভাবে ঘটেনি।
এই কারণে ভারতীয় শহরগুলোতে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়।
৫. অঞ্চলভিত্তিক বৈশিষ্ট্য
দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের শহরগুলোতে নগরায়নের হার বেশি।
উত্তর ও পূর্ব ভারতের শহর তুলনামূলকভাবে কম নগরায়িত।
৬. বস্তি বা Slum সৃষ্টি
কর্মসংস্থানের আশায় বিপুল মানুষ শহরে আসে, যা শহরের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি।
অনেকেই শহরের পারিপার্শ্বিক এলাকায় বস্তি (Slum) তৈরি করে বসবাস করে।
বস্তি ভারতীয় শহরের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
৭. নগরায়নের ধীর এবং দ্রুত বৃদ্ধি
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নগরায়নের হার ছিল ধীর।
দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর কারণে শহরায়ন কম ছিল।
১৯৩১ সালের পর নগরায়নের হার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
উপসংহার
ভারতের নগরায়ন একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া, যা প্রাচীন ইতিহাস, অর্থনৈতিক কার্যক্রম, গ্রামীণ অভিবাসন এবং অঞ্চলভিত্তিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। বড় শহরে মানুষের চাপ, শিল্প বিকাশের সীমাবদ্ধতা এবং বস্তির বৃদ্ধি নগরায়নের চিত্রকে বিশেষ করে। নগরায়নের এই বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝা কৃষি, শিল্প ও শহর পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
No comments: